পাঁচটি সহজ উপায়ে আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়ান!
আপনি হয়তো খেয়াল করে থাকবেন কিছু মানুষ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে
কিছু বিষয় মনে রাখতে পারছে অথচ আপনি অনেক চেষ্টা করেও গতকাল কি করেছেন সেটই
ঠিকভাবে মনে করতে পারছেন না। ক্লাসরুম থেকে অফিসে বসের প্রেজেন্টেশান কেউ একবারেই
বুঝে ফেলছে, অথচ আপনি পারছেন না। আপনি ভেবে বসে আছেন তাদের মতো হয়তো আপনার
স্মরণশক্তি অথবা বোঝবার ক্ষমতা নেই। তবে কি আপনার মেধা কম!
আসল ব্যাপারটা সেরকম নয়।
আমাদের প্রত্যেকেরই মস্তিষ্কের গঠন কিছুটা আলাদা। এবং এই মস্তিষ্ককেই প্রভাবিত করে
অসংখ্য পারিপার্শ্বিক বিষয়। তাহলে চলুন শিখে নেই সহজে বোঝা এবং মনে রাখার কিছু সহজ
কৌশল।
- সুযোগ পেলেই ব্যায়াম
করুন
ব্যায়াম শুধু আপনার
শারীরিক গঠনেই সামঞ্জস্য আনেনা, নিয়মিত ব্যায়াম আপনার মস্তিষ্ককেও সচল রাখে। আপনি
যদি স্থূলকায় হয়ে থাকেন তাহলে এই অতিরিক্ত চর্বি আপনার মস্তিষ্কে মারাত্মক
নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস আপনার শরীরের রক্তবাহী
নালীগুলোতে চর্বি জমতে দেয়না ফলে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ বজায় থাকে। রক্তনালীতে
চর্বি জমে থাকলে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়। ফলস্বরূপ
মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়। অতএব সুযোগ পেলেই ব্যায়াম করুন এবং সম্ভব হলে
নিয়মিত।
- যথাসম্ভব মানসিক চাপ
কমিয়ে আনুন
আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন,
অতিরিক্ত রেগে গেলে ওই মুহূর্তে আপনি সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারছেন না। অতিরিক্ত
রাগ, ক্ষোভ অথবা উদ্বেগ কিছু সময়ের জন্য হলেও আপনার মস্তিস্ককে স্থবির করে দেয় যা
কিনা স্মরণশক্তি কমে যাবার অন্যতম প্রধান কারন। মানসিক চাপ থেকে দুরে থাকা সম্ভব
নয়। কিন্ত যতটা সম্ভব বিষণ্ণতা অথবা উদ্বেগ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। বিষণ্ণতা
আপনার কলেস্টেরল লেভেল বাড়িয়ে দেয় যাতে করে মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাসের (যেখানে
শর্টটার্ম মেমোরি সংরক্ষিত থাকে) কার্যকারিতা কমে যায়। তাই রাগ, ক্ষোভ, বিষণ্ণতা
এবং মানসিক চাপ যতটা সম্ভব কমিয়ে ফেলুন।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক আট ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম আপনার
মস্তিষ্ককে অধিক কার্যকরী করে যা কিনা আপনি একটু খেয়াল করলেই লক্ষ্য করে থাকবেন।
মস্তিষ্ক ঘুমের সময় সাম্প্রতিক তথ্যগুলো সংরক্ষণ করে থাকে। ঘুমের সময়ই আপনার
মস্তিষ্ক পরবর্তী স্মৃতি ধারনের ক্ষমতা অর্জন করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত ঘুম শরীরকে
স্থূলকায় করে তোলে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ান।
- অন্যকে শেখানোর চেষ্টা করুন
ধরুন আপনি কিছুএকটা শিখতে গিয়ে সফল হলেন। সাথে সাথেই সম্ভব
হলে একি বিষয়টি অন্যকে শেখান। অন্যকে শেখাতে গিয়ে দেখবেন আপনার নিজের খুঁটিনাটি
কিছু ভুল ধরা পড়ছে। একি সাথে বিষয়টি চর্চাও হয়ে গেলো। নতুন করে শেখা এমন বিষয়গুলো
অথবা আপনার মাথায় আসা কোন ব্যাপার অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। এতেকরে দেখবেন ওই
লোকটাকে দেখামাত্রই আপনার তাকে শেখানো বিষয়টি মনে পড়ছে। এছাড়া অতিরিক্ত চর্চার
ফলেও বিষয়টি আপনার মস্তিষ্কে স্থায়ী হচ্ছে।
- পুষ্টিকর খাবার খান
ফ্রেশ ফল, সবুজ শাকসবজি, ডিম, দুধ, গমের রুটি জাতীয় প্রোটিন
ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার প্রচুর পরিমাণে খান। পর্যাপ্ত পরিমান বিশুদ্ধ পানি পান
করুন। যথাসম্ভব চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন। এতে করে ভিটামিন ও মিনারেল আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা
বাড়াবে। ধূমপান অথবা অন্য কোন মাদক সেবন থেকে দুরে থাকুন। কারন এগুলো আপনাকে সময়িক
প্রশান্তি দিলেও মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অন্যদিকে বাসি এবং দূষিত খাবার
পরিহার করুন।
এছাড়াও গান শোনা, বিষয়গুলো লিখে রাখা, হাসিখুশি থাকা আপনার স্মৃতিশক্তি এবং
বোঝার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। অসম্ভব বলে কিছু নেই। আপনার নিয়মিত চেষ্টা
আপনাকে অনেকদূর নিয়ে যাবে এই কামনা করি।
No comments