ডার্ক ওয়েব, ইন্টারনেটের সবচাইতে ভয়ংকর জগত!
আপনি হয়তো ভাবছেন গুগোল,
ইয়াহু, বিং এর মতো বড় বড় সার্চ ইঞ্জিনগুলো দিয়ে আপনি ইন্টারনেটের আদ্যোপান্ত ঘুরে
আসতে পারেন। অবাক করা বিষয় হচ্ছে এই ইন্টারনেট জগতের মাত্র ৬ শতাংশ তথ্য আমাদের
হাতের নাগালে। একজন সাধারণ ইন্টারনেট ব্যাবহারকারি শুধুমাত্র যে ওয়েবসাইট এবং ডিরেক্টরি
গুলো সার্চ ইঞ্জিন চিনতে পারে সেগুলোই প্রচলিত ব্রাউজার অথবা অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে
খুজে পেতে সমর্থ। এই ৯৪ শতাংশের রহস্য উন্মোচন করতে হলে কিছু বিষয় জেনে আসতে হবে।
সার্ফেস ওয়েব
সার্চ ইঞ্জিনগুলো
ইন্ডেক্সিং এর মাধ্যমে কোন ওয়েবের ঠিকানা সনাক্ত করে। তার মানে হল আমরা সার্চ করে
যে ফলাফলগুলো দেখতে পাই সেগুলো সার্চ ইঞ্জিন চিনতে এবং খুজে পেতে পারে। সাধারণ
ব্রাউজার গুলো যেমন গুগোল ক্রোম, সাফারি, মোজিলা ইত্যাদি দিয়ে আমরা সার্ফেস ওয়েবে
প্রবেশ করতে পারি।
ডিপ ওয়েব
ডিপ ওয়েব হোল সার্ফেস
ওয়েবের পরবর্তী স্তর। এই স্তর সাধারণ ক্ষতিকর নয়। বিভিন্ন কোম্পানির গোপনীয় তথ্য
যা কিনা গুটিকতক মানুষের হাতের নাগালে থাকুক এমনটাই চাওয়া হয়, সেগুলো ডিপ ওয়েবে
সংরক্ষিত। তথ্যের মালিক অথবা জড়িত ব্যাক্তিরা এই ধরনের ওয়েব এবং অ্যাপ্লিকেশান
গুলো সার্চ ইঞ্জিনে ইন্ডেক্সিং না করার ফলে সেগুলো আমরা খুজে পাইনা।
ডার্ক ওয়েব
ইন্টারনেট জগতের সবচাইতে
ভয়ংকর জায়গা হল এই ডার্ক ওয়েব। আপনি যত প্রকার অপরাধের কথা ভাবতে পারেন প্রায় তার
সবকিছুই এখানে হয়ে থাকে। কথিত আছে, উইকিলিক্স যে গোপন তথ্যভাণ্ডার সবার সামনে
উন্মোচন করে এতো সাড়া ফেলে দিয়েছে এ ধরনের তথ্য আদানপ্রদান ডার্ক ওয়েবে খুবই
সাধারণ একটি ব্যাপার। বিভিন্ন প্রকার অবৈধ কার্যকলাপের মধ্যে রয়েছে, অস্ত্র
কেনাবেচা, মাদক চোরাচালান, নির্যাতনের সরাসরি সম্প্রচার ইত্যাদি।
সাধারণ ব্রাউজার গুলো
দিয়ে এই ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ প্রায় অসম্ভব। কারন সাধারণ ব্রাউজার গুলো
ব্যাবহারকারির সবরকম তথ্য অনবরত সংগ্রহ করে। আর ডার্ক ওয়েবে ব্যাবরহারকারিরা
সাধারণত নিজেদের সব তথ্য গোপন রাখে।
ডার্ক ওয়েবে প্রবেশের
জন্য অনিওন নেটওয়ার্ক সবচেয়ে বিখ্যাত। এই নেটওয়ার্কে একজন ব্যাবহারকারি দ্বারা
প্রেরিত কোন কিছু কঠিন এঙ্ক্রিপ্সনের মধ্য দিয়ে সঠিক ঠিকানায় পৌছায়। ওনিওন
নেটওয়ার্ক ব্যাবহারের জন্য “টর ব্রাউজার” নামক একটি বিশেষ ব্রাউজারের প্রয়োজন পড়ে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, কি
কি সংগঠিত হয় এই ডার্ক ওয়েবে
আপনি হয়তো ইতিমধ্যে জানেন
কিভাবে টর প্রাউজার দিয়ে অনিওন নেটওয়ার্ক ব্যাবহার করে ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করতে
হয়। কিন্তু সমস্যা হল, এখানে আপনার পদে পদে ক্ষতিকর ভাইরাস দ্বারা আক্রমণের
স্বীকার হবার সম্ভাবনা আছে। অন্যদিকে কথিত আছে, আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো
অনিওন নেটওয়ার্কের উপর সর্বদা নজরদারি করে থাকে। তাই আমরা যারা অতিমাত্রায়
প্রযুক্তির এই বিষয়গুলো বুঝিনা, তাদের এই
জগতের কথা কল্পনার বাইরে রাখা উচিৎ। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিছু কার্যকলাপ যা চমকে
দেবে আপনাকে।
সবধরনের মাদক কেনাবেচা
এক গবেষণায় দেখা গেছে,
প্রায় ৬৪ শতাংশ সাধারণ ব্যাবহারকারি ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করে শুধুমাত্র মাদক
কেনাবেচার জন্য। অসংখ্য ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে নির্দ্বিধায় চলছে মাদক কেনাবেচা। এর
মধ্যে অনেক ওয়েবসাইট প্রতিনিয়ত সরকার বন্ধ করে দিলেও নতুন উদ্যমে সেটি শুরু হচ্ছে
আরেক ঠিকানা ব্যাবহার করে। মাদক চোরাচালানে সবথেকে বিখ্যাত ওয়েবসাইট “সিল্ক রোড”।
রস উইলিয়াম নামের এক আমেরিকানের তৈরি এই মার্কেটপ্লেস ২০১৩ সালে এফ, বি, আই বন্ধ
করে দেবার কয়েকমাসের মধ্যেই সেটি আবার চালু হয়েছিলো। সর্বোপরি এমন কোন মাদক নেই যা
কিনা ডার্ক ওয়েবে পাওয়া সম্ভব নয়।
অস্ত্র কেনাবেচা পাশাপাশি পেশাদার খুনিও ভাড়া পাওয়া যায় এখানে
আন্তর্জাতিক সব ধরনের
অবৈধ অস্ত্র ব্যাবসাই এই ডার্ক ওয়েবের সাথে কোন না কোন ভাবে সংযুক্ত। মাদকের মতই
অস্ত্রেও যেন পসরা সাজিয়ে বসেছে বিক্রেতারা। শুধু এই পর্যন্তই থেমে নেই। প্রফেশনাল
খুনিও ভাড়া করা যায় এই ডার্ক ওয়েব থেকে। কিছু যায়গায় আবার খুনির সফলতার মাপকাঠি বা
রেটিং দেখেও তার দাম নির্ধারণ হয়।
অত্যাচারের সরাসরি সম্প্রচার
যেহেতু আমার নিজের কখনো
এই বিক্রিত ব্যাপার দেখার সৌভাগ্য হয়নি তাই অন্যদের বরাত দিয়েই বলতে হচ্ছে, এই
ডার্ক ওয়েবে নাকি নারি ও শিশু অত্যাচার করে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এই পুরো
ব্যাপারটি ডার্ক রুম টর্চার নামেও পরিচিত। এই সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিও মানুষ
অর্থের বিনিময়ে দেখে থাকে। এছাড়া অবৈধ পর্ণোগ্রাফি, অশরীরী আত্মার পূজা ইত্যাদি
বিকৃত ভিডিও শেয়ার এখানে খুবই সাধারণ ব্যাপার।
হ্যাকিং ও ঝুঁকিপূর্ণ সফটওয়্যারের আদানপ্রদান
আপনি হয়তো জানেন, ব্ল্যাক
হ্যাট হ্যাকারেরা হয় সবথেকে বিধ্বংসী। এরা টাকার জন্য কারো ব্যাক্তিগত জীবন,
ওয়েবসাইট এমনকি বড় বড় ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানকেও ধংস করে দিতে সক্ষম। ডার্ক ওয়েবে
বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এই হ্যাকাররা নিজেদের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। চাইলে যে কেউ তাদের
দাবি করা অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে তাদের দিয়ে যে কোন ধরনের ভার্চুয়াল এট্যাক করিয়ে
নিতে পারে। এছাড়া সব ধরনের বই, সিনেমা, সফটওয়্যার যা কিনা আপনার সার্ফেস ওয়েব থেকে
টাকা দিয়ে কিনতে হয় সেগুলো হরহামেশা আদান প্রদান হয় এই ডার্ক ওয়েবে।
এছাড়া ভুয়া পরিচয়পত্র,
সরকারী গোপনীয় তথ্য চুরি ও আদানপ্রদান সবই হয় এখানে। কেনাবেচার মাধ্যাম হিসাবে
ব্যাবহার করা হয় বিটকয়েন (১ বিটকয়েন = ৯ মার্কিন ডলার) নামক এক ধরনেই কারেন্সি যা
কিনা কোথাথেকে আসছে অথবা কার কাছে যাচ্ছে সনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। সর্বোপরি এই
অন্ধকার জগতে যে কেউ নিজের পরিচয় লুকিয়ে ইচ্ছামতো অপরাধ করতে সক্ষম।
তাহলে কি এই অন্ধকার জগতের কোন ভালো দিক নেই?
হ্যা অবশ্যই আছে। উইকিলিক্স
এর ফাঁস করা অধিকাংশ তথ্য জানা সাধারণ মানুষের তথ্যগত অধিকার বলে ধরা হয় যা কিনা
এই ডার্ক ওয়েব ছাড়া সম্ভব হতোনা। এছাড়া রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চক্রান্তগুলো
এই ডার্ক ওয়েবের কল্যাণেই সাধারণ মানুষের সামনে আসে।
No comments